Saturday, April 26, 2025





সে এক চলমান মহাবিশ্ব!

 নারীদের প্রতি এক শ্রদ্ধার্ঘ্য।

লেখিকা: সাদিয়া সুলতানা ইকরা

.

পৃথিবীর প্রতিটি কোণে — কায়রোর রৌদ্রদগ্ধ রাস্তায় থেকে শুরু করে সাইবেরিয়ার বরফে ঢাকা মাঠে — সে হাঁটে। কখনো হাই হিল পরে, কখনো খালি পায়ে। কখনো কোলে সন্তান, কখনো বুকে স্বপ্ন চেপে ধরা। সে একজন নারী — আর সে-ই পৃথিবী গড়ার নীরব, জ্বলন্ত শক্তি।

নারীদের কথা বলার মানে শুধুমাত্র একটি লিঙ্গের কথা বলা নয়। এটা হলো সংগ্রামের, কষ্টে গড়া কবিতার, প্রজন্ম ধরে বয়ে চলা হাসির, এবং এমন হৃদয়ের গল্প বলা যা হাজারবার ভেঙেও সারিয়ে তোলার সাহস রাখে।


নীরব শক্তি:

.

বলা হয়, শক্তি জোরে চিৎকার করে, পাহাড়চূড়া থেকে নিজের কথা ঘোষণা করে। কিন্তু একজন নারীর শক্তি? সেটা ফিসফিস করে। সেটা মমতায় গান গায় নিজের দুঃখ চেপে রেখে। সেটা ঘরের অশান্তি আর শান্তির মাঝে আপোষ করায়। সে প্রতিদিন সকালে উঠে লড়াই করে — এমন সব যুদ্ধে, যেগুলোর কোনো নাম নেই — অসমতা, নিজের শরীর নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, অপূর্ণ স্বপ্ন। তারপরও সে হাসে। হাসে এমনভাবে, যেন সব ঠিক আছে।

সে আকাশের অর্ধেক ধারণ করে, অথচ প্রায়ই তাকে বলা হয় “বেশি আবেগপ্রবণ,” “বেশি উচ্চাভিলাসী,” “বেশি সাহসী।” তবুও সে এগিয়ে চলে -- নিজেকে প্রমাণ করার জন্য নয়, বরং সে যে কখনোই কারো অনুমতির অপেক্ষায় থাকেনি তা প্রমাণ করতে -- নিজের ভেতরের আগুনকে সম্মান জানাতেই তার পথচলা। সেই আগুনই যুগে যুগে বিপ্লব ঘটিয়েছে, আইন পরিবর্তন করেছে, জীবন গড়েছে।


মা, বোন, কন্যা, যোদ্ধা:

.

নারী বিভিন্ন রূপে মানবতাকে অনন্য সৌন্দর্যে সাজায়। মা হিসেবে সে ভবিষ্যৎ ধারণ করে। বোন হিসেবে সে বিশ্বস্ততার শিক্ষা দেয়, নিঃস্বার্থভাবে অনেক কিছু ত্যাগ করে। কন্যা হিসেবে সে এমন এক কবিতা যা বাবার হৃদয়ে গেঁথে থাকে। বন্ধু হিসেবে সে এমন শ্রোতা, যে সময়ের তোয়াক্কা না করে মন দিয়ে শোনে। আর যোদ্ধা হিসেবে? সে কিছুই ভয় পায় না -- এমনকি একা দাঁড়িয়ে থাকাকেও নয়।

ইতিহাস রাজা আর বিজেতাদের নাম মনে রাখে, কিন্তু ভুলে যায় সেইসব নামহীন নারীদের কথা -- যারা মোমের আলোয় কাপড় সেলাই করত, যুদ্ধক্ষেত্রের পাশে সন্তান মানুষ করত, গাছতলায় শিশুদের অক্ষর শেখাত, কিংবা প্রতিদিন মাইলের পর মাইল হাঁটে পানি আনত -- সবই সম্মানের সঙ্গে।


প্রতিদিনের জাদু :

.

নারীরা জাদুকর। কারণ তারা এক অবিচারপূর্ণ সমাজে বেঁচে থাকে -- তবুও আলো ছড়ায়। সেই মা, যে প্রতিদিন ভোরে উঠে সন্তানের খাবার তৈরি করে, সেই কিশোরী, যে একদিন মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্ন দেখে, সেই দাদি, যার কাছে ১৯৫৪ সালের ভালোবাসার চিঠিগুলোর গল্প আজও জীবন্ত -- প্রত্যেকেই মানবজাতির মহাকাব্যের একেকটি অধ্যায়।

তারা রক্ত ঝরায়, তবুও ভাঙে না। তারা কাঁদে, তবুও আনন্দ সৃষ্টি করে। তাদের বলা হয় “তুমি পারবে না,” আর তারা জবাব দেয়, “দেখো আমি কেমন পারি।” মালালার সাহস থেকে শুরু করে তোমার নিজের মায়ের আত্মত্যাগ --প্রতিটি নারী একেকটি মহাবিশ্ব।


তাকে থাকতে দাও :

.

তাকে কাঁদতে দাও, দুর্বল বলো না।

তাকে বলার সুযোগ দাও, থামিয়ে দিও না।

তাকে উঠতে দাও, টেনে নামিও না।

তাকে হেসে উঠতে দাও।

তাকে ভালোবাসতে দাও।

তাকে নিজের মতো করে বাঁচতে দাও।

এই পৃথিবীকে তাকে "বাঁচাতে" হবে না।

শুধু তার শিকল খুলে দিতে হবে।


প্রিয় প্রতিটি নারী, এই লেখাটা তোমার জন্য:


তুমি কখনোই "অতিরিক্ত" নও।

তুমি নরম বলে কম শক্তিশালী নও।

তুমি জোরে বলো বলে বিরক্তিকর নও।

তুমি ঠিক যেমন, ঠিক তেমন করেই পৃথিবী তে তোমাকে প্রয়োজন।


তুমি এক টুকরো শিল্প।

তুমি মেঘের মাঝে বজ্রধ্বনি।

তুমি শুধু পৃথিবীর একটি অংশ নও।

তুমি-ই পৃথিবী।

সে এক চলমান মহাবিশ্ব!  নারীদের প্রতি এক শ্রদ্ধার্ঘ্য। লেখিকা: সাদিয়া সুলতানা ইকরা . পৃথিবীর প্রতিটি কোণে — কায়রোর রৌদ্রদগ্ধ রাস্তায় থেকে শুর...